সীমাহীন স্ট্রেস নাটক
“ভাতের থালা সামনে রেখে হাঁপুস নয়নে কেঁদে ভাসালেন বিএলও” জাতীয় রসঘন হেডলাইনস
ভিডিও দেখে প্রথমেই আমার নারায়ণ মূর্তি সাহেবের কথা মনে পড়ল। মহা উদ্যোগী, মহা পুরুষ। সুপণ্ডিত স্ত্রীয়ের কাছ থেকে, জমানো মাত্র ১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে, বাড়ির গ্যারাজে খুলেছিলেন, #ইনফোসিস। বাকিটা ইতিহাস। তো এই মাস কয়েক আগে, এক টিভি সাক্ষাৎকারে নারায়ণ মূর্তি সাহেব বলেন, যুব-ভারতের সপ্তাহে ৭২ ঘন্টা কাজ করা উচিত। সেই প্রসঙ্গেই তিনি #চিনের কুখ্যাত ৯৯৬ কর্ম সংস্কৃতির কথা বলেন। ৯৯৬ মানে, সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা, সপ্তাহে ৬ দিন। মূলত ২০১০ সাল নাগাদ, চিনের বিভিন্ন সংস্থায়, আন্তর্জাতিক বাজারের দখল নিতে, উৎপাদন ও মুনাফা দুইই বাড়াতে, এই ৯৯৬ কর্ম সংস্কৃতি চালু হয়। মুশকিল হল, চিনের চেয়ারম্যানকে নিজেদের চেয়ারম্যান ভেবে আজও চোঁয়া ঢেঁকুর তোলা সমাজে, সঠিক সময়ে এমন কঠোর কর্ম সংস্কৃতির ছিঁটে ফোঁটাও হজম করার প্রবৃত্তি দেখালে, আজ হয়ত এই বিএলও ভাষ্য নিয়ে বগল বাজানোর লোক বাজারে আদৌ খুঁজে পাওয়া যেত না। তবে এসব হল, বড় বড় ব্যাপার। আমরা বরং বিএলও এবং তাঁদের “চাপ” এর মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখি।
১. বিএলওদের কাজ কী ?
সংশ্লিষ্ট বুথের বাড়ি বাড়ি যাওয়া। ভোটারদের এনিউমারেশন ফর্ম দেওয়া। আবার কয়েকদিন বাদে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পূরণ করা ফর্ম সংগ্রহ করা। এরপর ফর্ম গুলো অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাইজড করা।
২. আচ্ছা, একটি বুথে ভোটার কত ?
আমাদের দেশে বুথ প্রতি ভোটার মোটামুটি ৮০০ থেকে ১২০০। রাজনৈতিক দলগুলিই বলছে ওই, গড়ে ১০০০ ধরুন।
৩. ১০০০ মানুষ মোটামুটি কতগুলো বাড়িতে বসবাস করেন ?
রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, ওই গড়ে ৩০০ ধরুন। তার বেশি, প্রায় বিরল।
৪. তাহলে হিসেব কী দাঁড়াল ?
একজন বিএলও ৩০০ বাড়িতে তাহলে ২ বার মানে মোট ৬০০ বার যাবেন।
৫. দিনে তাহলে কত বার ?
৬০০/৩০=২০ বার। কারণ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন ৩০ দিন সময় দিয়েছে।
প্রশ্ন হল, এই যে দিনে ২০ টি বাড়ি যাওয়া আর তারপর অ্যাপে তথ্য তোলা, এটি কত চাপের কাজ ?
আচ্ছা, আপনারা কি জানেন, এই যে হাসপাতালে যান, সেখানে জুনিয়র ডাক্তার বা আরএমও-রা সপ্তাহে দু দিন ২৪ ঘন্টা ডিউটি করেন ?
রাস্তায় ট্র্যাফিক সামলান যে পুলিশ, বা থানায় ডিউটি করেন যাঁরা, তাঁরা প্রায় ১২ ঘন্টা কাজ করেন, জানতেন ?
হাকিমপুর সীমান্তে গিয়ে যে সংবাদ কর্মীরা, হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন, তাঁরা দিনে কত ঘন্টা কাজ করেন, জানেন ?
এই যে নুন বা পান্তা, যা ইচ্ছে, যখন ইচ্ছে অনলাইনে অর্ডার করছেন, পরিসংখ্যান বলছে, সুইগি, জোমাটো, ব্লিংকিট, জেপটোর সেই সব ডেলিভারি বয়রা, প্রায় ৪০ থেকে ৬০ টি বাড়িতে যায় প্রতিদিন।
এঁরা সব, কাজের চাপে “হাঁপুস নয়নে” কাঁদছে, ঘাবড়ে গিয়ে ট্রেনের সামনে লাফাচ্ছে বা আঙুলবিহীন হাতে সুইসাইড নোট লিখছে, কখনও শুনেছেন ?
SIR আসলে আমাদের বিরাট বড় এক প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন । একদিকে বাংলায় “অতিথি বৎসল অনুপ্রবেশের” সব কৌশল যেমন ফাঁস করে দিয়েছেন, তেমনই SIR -এর সিটি স্ক্যানে ধরা পড়েছে এক গভীর অসুখ। #কর্মবিমুখতা আর কর্ম অদক্ষতার কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে সর্বত্র। বিভিন্ন ইউনিয়ন আর সংগঠনের স্নেহচ্ছায়ায় চামড়া আর চর্বিতে কর্মদক্ষতা নয়, আনুগত্য ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে দশকের পর দশক। আহ্লাদিত বাঙালি তাতেই মোক্ষ ও মুক্তি খুঁজেছে। তাই আজ সহজ সিলেবাসও অজানা, দুষ্কর লাগছে।
বাঙালির ঠাকুর দেখার প্রবণতা নিয়ে কাজ করা এক সংস্থার এক কর্তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কাজ এখনও চলছে। তবে তিনি আমাকে এক চমকপ্রদ পরিসংখ্যান দিয়েছেন। তিনি বলছেন, “বর্ধিত দুর্গা কার্নিভালে”, যেহেতু এখন মহালয়ার দিন থেকে কার্নিভাল পর্যন্ত হিসেব করা হচ্ছে, এক একজন হুজুগে বাঙালি প্রায় ৫০ থেকে ৮০ টি প্যান্ডেলে ঘোরেন। মফস্বলে প্রায় ৩০ থেকে ৪০। তবে ওই হুজুগে বাঙালির মধ্যে বিএলও-রাও থাকেন কিনা, তার হিসেব অবশ্য হয়নি।
শেষ করব, আমার গঙ্গারামপুরের সেই দুই ভাইয়ের কথা লিখে। আমার নয়ডার ফ্ল্যাটে বাথরুম পরিষ্কারের জন্য একবার আরবান কোম্পানির সার্ভিস বুক করেছিলাম। প্রতি সপ্তাহেই করি। কিন্তু ২০২২ সালের সেই রবিবার, আমাকে চমকে দিয়ে যে দুজন এসেছিলেন, তাঁরা আমার গঙ্গারামপুরের দুই পরিযায়ী ভাই। হাজার মাইল পথ পেরিয়ে আসলে তো এসেছিলেন অ্যাপ নির্ভর মেথর পরিষেবা দিতে, তাই না ? জানেন তো, সেই পুরো প্রক্রিয়ায়, কায়িক শ্রম ছাড়াও ডিজিটাল জ্ঞান লাগে। সাইট, মানে বাথরুমে দাঁড়িয়ে নিজের সেলফি তুলে আপলোড করতে হয়। ওটিপি নিয়ে অ্যাপ-এ আপলোড করতে হয়। কাজ শেষে, ফিডব্যাক লিঙ্ক পাঠাতে হয়। জানেন নিশ্চয় ? প্রশ্ন হল, অষ্টম শ্রেণি ফেল দুই পরিযায়ী শ্রমিক সেটা পারে, আর আপনি পারেন না, বিএলও !!!!
@ সংগৃহীত
#SIR #westbengalpolitics
#mamtabanerjee #tmc
#bjp #followers
#fypシ #highlights
Sandi Martin
#fblifestyles

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন