কুমির এবং এলিগটরের পার্থক্য ।
কুমির এবং এলিগটরের এমন কতক গুলি প্রধান পার্থক্য আছে যা সাধারণত চোখে পড়ে না কিন্তু ব্যাপারটা বুঝে গেলে সাধারণ চোখেও সহজেই ধরা পড়ে ।
সাধারনত প্রায় প্রত্যেকেই কুমিরএবং এলিগেটরপ্রানীদের সাথে পরিচিত । কিন্তু |
বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য ও আচরন এক ই রকম হওয়ায় অনেকেই এদের কুমির হিসাবে গুলিয়ে ফেলে । তবে
কিছু মিল থাকলেও আলাদা করে চেনার জন্য যথেষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে এবং এরা ভিন্ন জৈবিক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত । দেখতে আলাদা বা আচরণ একই রকম নয় । তো বন্ধুরা আজ এই ভিডিও তে আমরা কুমির এবং এলিগেটরের পার্থক্য আলোচনা করব ।
![]() |
কুমির এবং এলিগেটর ভিন্ন জৈবিক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত |
বাসস্থান ভিত্তিক পার্থক্য :
এলিগেটর গুলি যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনে বসবাস করে সেখানে কুমির গুলি এশিয়া আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাসহ প্রায় সমগ্র বিশ্বে বসবাস করে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কুমিরের তুলনায় এলিগেটরের সংখ্যা অনেক বেশি এখানে কয়েক মিলিয়নেরও বেশি এলিগেটর আছে কিন্তু কুমিরের সংখ্যা প্রায় ২000 । সাউদার্ন ফ্লোরিডা পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে কুমির এবং এলিগেটর পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যায়।
স্নাউট বা থুতনির পার্থক্য:
এলিগেটর এবং কুমিরের মধ্যে অন্যতম প্রধান পার্থক্য হল স্নাউট বা থুতনি । একদিকে এলিগেটর দের থুতনি যেমন বড় চওড়া এবং ইউ আকৃতির মতো দেখতে হয় অন্যদিকে কুমিরদের থুতনি লম্বা পয়েন্টেড ভি আকৃতির মতো দেখতে হয় তবে এর ব্যতিক্রম আছে যেমন ভারতীয় মগ কুমির যাদের চওড়া থুতনি হয় এবং আমাজনের ক্যাইমন এলিগেটর দের কিছু প্রজাতি যাদের ভি আকৃতির থুতনি হয় ।
দাঁতের পার্থক্য :
মুখ বন্ধ অবস্থায় এলিগেটর এবং কুমিরকে সহজে আলাদা করে চেনা যায় । এলিগেটর এর ক্ষেত্রে উপরের চোয়াল নিচের চোয়ালের চেয়ে বেশি চওড়া হওয়ার কারণে বন্ধ অবস্থায় মুখের দাঁত দেখা যায় না । একে ওভার বাইট বলা হয় অন্যদিকে কুমিরের উপরের চোয়াল এবং নিচের চোয়ালের চেয়ে চওড়া হওয়ার কারণে দাঁত লুকোতে পারে
না উপরের দাঁত এবং নিচের দাঁত দেখা যায় যাকে ইন্টারলক বলে।
![]() |
ছবিতে বা দিকে থুতনির পার্থক্য এবং ডান দিকে দাঁতেরপার্থক্য দেখানো হয়েছে |
ত্বকের রঙ :
বন্ধুরা আমরা যদি ত্বকের রঙের কথা বলি তাহলে কুমিরের ত্বকের রং সাধারণত হালকা ধূসর বা জলপাই রঙের হয়ে থাকে অন্যদিকে একটি এলিগেটর ত্বকের রং কালো এবং ধূসর কালো হয়ে থাকে।
![]() |
বাঁ দিক থেকে কুমির এবং এলিগটর |
জল ভিত্তিক আবাসস্থল :
বন্ধুরা যদি জল ভিত্তিক আবাসস্থলের কথা বলা হয় তাহলে কুমির এবং এলিগেটরদের অবস্থানের পার্থক্য পরিষ্কার । একদিকে যেমন কুমির গুলি লোনা জল এবং মিঠা জল উভয় জলে বাস করতে সক্ষম অন্যদিকে এলিগেটর গুলি শুধুমাত্র মিঠা জলে বাস করতে অভ্যস্ত এর কারণ হিসেবে ধরা হয় এক বিশেষ গ্রন্থিকে উভয়ের মধ্যেই থাকে যার কাজ হলো শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ বের করে দেওয়া । তবে এই গ্রন্থে শুধুমাত্র কুমিরের ক্ষেত্রেই সক্রিয় অবস্থায় থাকে এলিগেটরের ক্ষেত্রে কোনটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে বা ঠিকমত কাজ করেনা
আকার এবং ওজনগত পার্থক্য :
যদি দৈর্ঘ্যৈর কথা হয় তবে আমেরিকান এলিগেটর
চাইনিজ এলিগেটরদের থেকে বড় হয় যেখানে একটি আমেরিকান এলিগেটর গড়ে ১৩ থেকে ১৫ ফুট লম্বা হয় এবং ওজন ৩৬০ থেকে ৪৫০ কেজি পর্যন্ত হয় সেখানে একটি চাইনিজ এলিগেটর গড়ে ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ওজন ৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়। এখনো পর্যন্ত সর্বাধিক লম্বা আমেরিকান এলিগেটর ২০ ফুট পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ।
অন্যদিকে কুমিরের গড় দৈর্ঘ্য ১৫ থেকে ২০ ফুট এবং ওজন ১০০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে । এক্ষেত্রে আফ্রিকান নাইল কুমির বা অস্ট্রেলিয়ার এস্টারাইন কুমিরের দৈর্ঘ্য বেশি হয় গড়ে ১৭ থেকে ২০ ফুট ।সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ ফুট পর্যন্ত এবং ওজন প্রায় ১৩০০ কেজি । তবে বামন কুমির বা ডোয়ার্ফ কুমির দৈর্ঘ্যে ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
গতিবেগ :
কুমির এবং এলিগেটর উভয়েই উভয়চর প্রানী হিসাবে জলে এবং স্থলে দ্রুত বিচরন করতে সক্ষম তবে স্থলে এদের গতি অনেক কম হয় । কুমির স্থলে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা দৌড়াতে বা গ্যালপিং করতে পারে তবে তা সল্প দুরত্বের জন্য সর্বোচ্চ গতিতে বেশি দুর যেতে পারে না । অন্যদিকে এলিগেটর প্রায় সর্বোচ্চ প্রতি ঘন্টা ১৮ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে বা গ্যালপিং করতে সক্ষম । তবে এরা সর্বোচ্চ গতিতে কুমিরের থেকে বেশি দুর যেতে পারে ।
স্থলভাগে এদের গতি কম হলেও জলে এদের ফুর্তি এবং গতি অবাক করার মত । দুটি সরীসৃপ ই জলে প্রতি ঘন্টা ৩২ কিলোমিটার গতিতে সাঁতার কাটতে সক্ষম । বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু ক্ষেত্রে কুমিরের গতি ঘন্টায় প্রায় ৪০ কি: মিঃ পর্যন্ত হতে পারে । তবে জল এবং স্থলে গতির এই পার্থক্যের জন্য এদের লেজ কে বিশেষ কারণ হিসেবে ধরা হয় । এরা জলে লেজ কে ব্যবহার করে গতি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় যারা স্থলভাগে করতে সক্ষম হয় না ।
তবে এদের মুল শক্তি এবং পার্থক্য দুটি প্রধান পয়েন্ট এ লুকিয়ে আছে যা এদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র ।
আক্রমনাত্মক স্বভাব :
আক্রমণাত্মক স্বভাবের তুলনা করা যায় তাহলে দেখা যায় প্রাকৃতিক ভাবে এই দুই প্রানীই ভয়ংকর এবং সহজাতভাবে আক্রমনাত্মক ।
তবে এলিগেটর কুমিরের চেয়ে কম আক্রমনাত্মক এবং ভিরু । একটি এলিগেটর সাধারণত হরিন কচ্ছপ মাছ ইত্যাদি ছোট প্রানীদের শিকার করে । এরা মানুষের সংস্পর্শে এলেই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে । অপ্রত্যাশিতভাবে বিরক্ত বা বাচ্চাদের ওপর হামলার আশঙ্কা না থাকলে মানুষ কে আক্রমন করে না । আজ পর্যন্ত এলিগেটরের আক্রমনে আহত ও নিহত মানুষের অতি সামান্য । অন্যদিকে একটি কুমির অতি আক্রমনাত্মক । সাধারণত এই প্রানী নিজের উদরের জন্য কোন প্রানী কেই আক্রমণ করতে ছাড়েনা জলাশয়ের সম্রাট ভাবে এরা নিজেদের । তাই নিজের এলাকায় অন্য প্রানীদের উপস্থিতি সহ্য করে না । অনেক সময় এই কারনেও আক্রমন করে । এরা সাধারণত মাছ কচ্ছপ হরিন সহ বড় প্রানী জেব্রা মহিষ, উইলডারবিষ্ট ইত্যাদি শিকার করে । তবে জল পান করতে আসা সিংহ চিতা এমনকি হাতি কেউ কখনো কখনো ছাড়ে না । প্রতি বছর শত শত মানুষের ওপর প্রানঘাতী হামলার জন্য দায়ী করা হয় আফ্রিকান নাইল কুমির কে ।
কামড় শক্তি বা বাইট ফোর্স :
কামড় শক্তি বা বাইট ফোর্স এর তুলনায় আসলে বলতে
হয় এটাই এই দুই প্রানীর শিকার ধরার আসল অস্ত্র । এদের দুই চোয়ালের মাঝে আটকে গেলে শিকারের নিস্কৃতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। একটা সঠিক কামড়ই শিকারের মৃত্যু নিশ্চিতকরতে পারে । একটি এলিগেটরের কামড় শক্তি
প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ২৯০০ পাউন্ড যেখানে একটি কুমিরের প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৩৭০০ পাউন্ড তবে
বিশেষজ্ঞদের মতে কুমিরের ক্ষেত্রে এটি কখনো কখনো ৫০০০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে ।
copyright @knolezbangla
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন