আস্তিনের সাপ পি এফ আই ।
বাংলায় যার খায় তাকেই ছোবল মারে ভারতের গনতান্ত্রিক পরিসরের সুযোগ নিয়ে অসংখ্য আস্তিনের সাপ বড় হচ্ছে এবং সময় মত ঠিক ছোবল মারছে ।
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত বারোটা পার করে একটার দিকে অগ্রসর , তারিখ সবে একুশ থেকে বাইশে হয়েছে । নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গোটা দেশ। আর ঠিক এই সময়ে জাতীয় তদন্ত সংস্থার (NIA) অফিসার ও কর্মীরা নেমে পড়লেন দেশজুড়ে এক বিশাল অভিযানে। অংশ নিলেন একজন ADG র নেতৃত্বে ৪ জন IG, ১৬ জন SP সহ প্রায় ২০০ জন। এছাড়া ছিল সংশ্লিষ্ট রাজ্য পুলিশ ও CAPF এর সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ানরা। গোটা ঘটনাটি মনিটর করার জন্য খোলা হয় ৬টি কন্ট্রোল রুম। এছাড়া নয়াদিল্লির স্বরাষ্ট্র দপ্তরে (MHA) খোলা হলো Command Control Centre, যেখানে সারারাত জেগে বসে রইলেন কেন্দ্রীয় হোম সেক্রেটারি। রাতভর চলা এই অভিযানে ধরা পড়লো মোট ১০৬ জন। এরমধ্যে কেরালায় ২২ জন, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রে কুড়ি জন করে ৪০ জন, তামিলনাড়ুতে ১০ জন, আসামে ৯, উত্তর প্রদেশে ৮, অন্ধ্রে ৫, মধ্যপ্রদেশে ৪, দিল্লি ও পন্ডিচেরীতে তিনজন করে ৬ এবং রাজস্থানে ২ । উদ্ধার হয়েছে শ'দুয়েক মোবাইল ফোন, একশো ল্যাপটপ এবং অসংখ্য নথিপত্র যার মধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্কের পাশবুক সহ বিভিন্ন ভাষায় দেশবিরোধী ভাষণের অডিও/ভিডিও ক্লিপ। কারা এই সোনার চাঁদ, যাদের জন্য সরকার কে মাঝরাতে চালাতে হলো এতবড় একটা অভিযান ?
![]() |
Image collected unknown source |
জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে মাত্র ছ'বছর.....!
সন ২০১৬, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কেরালায় কুন্নুরের কাছে কনকমালা নামে এক জায়গায় হানা দেয় NIA এর একটি দল। গ্রেপ্তার হওয়া যুবকরা ছিল "আল জারুল খলিফা" নামে একটি সংগঠনের সদস্য। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ লাগিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়া। সেজন্য তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুনদের দলে ভেড়াতো। পরে আবিষ্কার হয় এরাই এদেশের প্রথম IS মডিউল। এদের বেশিরভাগই ছিল Popular Front of India (PFI) এর সদস্য। ঘটনার কয়েকমাসের মধ্যেই কেরালার ঐ গ্রাম থেকে নারী পুরুষ মিলিয়ে মোট ২২ জন নিখোঁজ হয়ে যায়। এরা সবাই পরে আফগানিস্তান গিয়ে IS এ যোগ দেয়। বেশ কিন্তু এরমধ্যে PFI এলো কিভাবে....?
![]() |
ছবি কৃতজ্ঞতা : গুগল ইমেজ উইকিমিডিয়া |
২০০১ সালে সিমি বা স্টুডেন্ট ইসলামিক ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা হতেই জঙ্গি মনোভাবাপন্ন চরম পন্থিরা একত্রিত দানা বাঁধতে পারছিলনা ।
২০০৬ সালে ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট ফ্রন্ট, কর্ণাটক ফোরাম ফর ডিগনিটি এবং তামিলনাড়ুর মনিথা নীথি পাসরাইয়ের মিলে গঠন করে পি এফ আই বা পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া। পরে ২০০৯ সালে গোয়ার নাগরিক ফোরাম , রাজস্থানের সাথে একত্রিত হয়ে কমিউনিটি সোশ্যাল অ্যান্ড এডুকেশনাল সোসাইটি, পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি, মণিপুরের লিলং সোশ্যাল ফোরাম এবং অন্ধ্রপ্রদেশের অ্যাসোসিয়েশন অফ সোশ্যাল জাস্টিস। তবে গালভরা আপাতনিরীহ সামাজিক ন্যায় উন্নতির নাম গুলিকে বিশ্বাস যোগ্য করে তুলতে মুসলিম সমাজকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের অন্তর্ভুক্তি করন করা হয় । কিন্তু মুল মাথা গুলো বা পরিচালনা এবং পরিচালন পদ্ধতি নিষিদ্ধ হওয়া সিমি সদস্যদের । এরপর বিভিন্ন ভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক চরম হিংসাত্মক ঘটনা কে বাস্তবায়িত করতে থাকে । বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ইসলামিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে সংযোগ, অস্ত্র রাখা, অপহরণ, হত্যা, ভয় দেখানো, ঘৃণামূলক প্রচারণা, দাঙ্গা, লাভ জিহাদ এবং ধর্মীয় উগ্রবাদের বিভিন্ন কাজ। ২০১০ সালে, প্রফেসর টিজে জোসেফের উপর হামলা । ২০০৩ সালে অসংগঠিত ভাবেই মারাদ দাঙ্গা ও গনহত্যায় কয়েক জন কে গ্রেফতার করা হয়।
![]() |
ফটো সংগৃহীত |
২০১২ সালে, কেরালা সরকার একটি হলফনামায় কেরালা হাইকোর্টকে জানায় যে ২৭ টি খুনের ঘটনায় সক্রিয় জড়িত ছিল, যার বেশিরভাগই CPI-M এবং RSS- এর কর্মী ।
![]() |
ফটো সংগৃহীত |
২১ মে ২০২২ -এ , কেরালার আলাপুঝাতে PFI দ্বারা আয়োজিত একটি সমাবেশে "প্রজাতন্ত্র বাঁচাও" বলা হয়, অন্য একজনের কাঁধে বসা একটি
শিশু স্লোগান তুলেছিল "হিন্দুদের তাদের শেষকৃত্যের জন্য ভাত রাখা উচিত এবং খ্রিস্টানদের উচিত তাদের জন্য ধূপ রাখা। শেষকৃত্য. আপনি যদি শালীনভাবে বাস করেন তবে আপনি আমাদের দেশে বাস করতে পারেন এবং আপনি যদি শালীনভাবে না বাস করেন তবে আমরা আজাদী (স্বাধীনতা) জানি। শালীনভাবে, শালীনভাবে, শালীনভাবে বাঁচুন।"
ভিডিও লিংক
এপ্রিল ২০১৩ -এ উত্তর কেরালা জুড়ে PFI কেন্দ্রগুলিতে কেরালা পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে অন্যান্য জিনিসগুলির মধ্যে মারাত্মক অস্ত্র, বিদেশী মুদ্রা, মানুষের গুলি করার লক্ষ্যবস্তু, বোমা, বিস্ফোরক কাঁচামাল, গানপাউডার, তলোয়ার পাওয়া যায়। কেরালা পুলিশ দাবি করেছে যে অভিযানে পিএফআই-এর "সন্ত্রাসী মুখ" প্রকাশ পেয়েছে। কান্নুরের নারথে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে অভিযান চালিয়ে পিএফআই-এর ২১ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। দুটি দেশীয় বোমা, একটি তলোয়ার, বোমা তৈরির কাঁচামাল এবং পিএফআই-এর নামে প্যামফলেট জব্দ করেছে পুলিশ। ২০১৭ সালে এর মহিলা শাখা প্রকাশ্যে আসে সাসপেক্ট জয়নাবা র মাধ্যমে যে আখিলা ধর্মন্তকরন কেসে মূল আরোপি ।
তীব্র সন্দেহ করা হচ্ছে যে ভারতে সাম্প্রতিক কালে ধর্মীয় উত্তেজনার বিভেদ সৃষ্টির এবং সি এ এ বিরোধী নাশকতায় এই সংগঠনটি জড়িত আছে ।
![]() |
ছবি কৃতজ্ঞতা : টাইমস অফ ইন্ডিয়া |
২০১৭ সালে, ইন্ডিয়া টুডে, একটি গোপন অভিযানে, PFI-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং PFI মুখপত্র Thejas- এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আহমদ শরীফের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল । সাক্ষাত্কারে, যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে পিএফআই এবং সত্য সারিনির উদ্দেশ্য ভারতকে একটি ইসলামিক দেশে রূপান্তরিত করা, তিনি বলেছিলেন "সারা বিশ্বে। শুধু ভারত কেন? ভারতকে ইসলামিক রাষ্ট্র করার পরে এবং তারা অন্য রাজ্যে চলে যাবে" . তিনি আরও স্বীকার করেছেন যে পিএফআই অতীতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তহবিল সংগ্রহ করেছিল এবং হাওয়ালা চ্যানেলের মাধ্যমে তা ভারতে স্থানান্তর করেছিল
ঐ যে কেরেলা সরকার ওরা কি বামফ্রন্টের বাইরের সরকার ? ওরা কি পি এফ আই যত সব খুনের কেসে এবং অশান্তি লাগানোর কেসে জড়িত , তাদের প্রতি কোনো শিথিলতা দেখিয়েছে ? আইন অনুযায়ী যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা সবই করেছে । তাহলে আপনাদের আপত্তি কোথায় ? অবশ্য কেরেলাতে আর এস এস সংগঠন কতটা খুনের কেসে জড়িত এবং দাংগা হাংগামার কেসে জড়িত সেই প্রশ্ন কেনো করছেন না ? আর অন্য সব রাজ্যে পি এফ আই এবং আর এস এস কি করেছে, কি কি কেসে জড়িত আছে, সেটা কেউ বলছেন না কেনো ? যতগুলি সাম্প্রদায়িকতাবাদী সংগঠন তাদেরকে ব্যান করার দাবা করছেন না কেনো ?
উত্তরমুছুন